শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার সময়সীমা নিয়ে আমরা এখনই কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না। তবে, আমরা এই পরিস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি এবং দ্রুত সমাধানের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
বুধবার (১ জানুয়ারি) ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে’, এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছেন, ‘৩০ জানুয়ারির মধ্যে’ সব বই সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে, আমি এখানে কোনও নির্দিষ্ট তারিখের প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং এ বছর তা যেন একপ্রকার যুদ্ধের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে না পারায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং আমরা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আরও ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করব।”
তিনি বলেন, “পাঠ্যবই তৈরির প্রক্রিয়া ও এর পেছনে থাকা শ্রম সম্পর্কে সবাইকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক সময়ে মানসম্পন্ন বই সরবরাহ করা, এবং আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা অতিক্রম করেই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমত, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পাঠ্যবই বিদেশে ছাপানো হবে না। এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কারণে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে এবং অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। তবে কাজ শুরু করতে যে বিলম্ব হয়েছিল, সেটাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পরিমার্জনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত, নিরপেক্ষ বিষয়বস্তু নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। এ কাজ ছিল সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
বই ছাপানোর মান নিয়েও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। “শিশুদের হাতে বই যাচ্ছে, তাই কাগজ, ছাপা এবং মলাটের মান উন্নত করতে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। তাছাড়া এনসিটিবিতে যাদের আগে দায়িত্বে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। নতুন দল দায়িত্ব নিলেও তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “কাগজের মান ঠিক রাখা এবং বই ছাপার কাজে কোনও ধরনের গাফিলতি যেন না হয়, সেজন্য ঢাকার শিক্ষকদের তদারকিতে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় নজরদারি করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক কিছু চেষ্টাও ছিল, যা আমরা অতিক্রম করেছি। এমনকি আজও কিছু জেলায় বই আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও আমরা কাজটি শেষ করতে পেরেছি।”
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অনেক প্রেসের মালিক এবং কাগজ উৎপাদনকারী সংস্থা আমাদের কম মূল্যে সহায়তা করেছেন। তাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখনো সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে সান্ত্বনা এই, নতুন বইগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হবে এবং বছরের মাঝামাঝি মলাট ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা আর ঘটবে না।”
ষড়যন্ত্রের বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি গল্পের মতো—শেষ না হওয়া পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীকে বোঝা যায় না। ষড়যন্ত্রকারী যে কেউ হতে পারে, তা সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি, মজুতদার বা সিন্ডিকেটের কেউ হতে পারে। তবে এখনই কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমরা এ অভিজ্ঞতা থেকে শিখব এবং ভবিষ্যতে একচেটিয়া ব্যবসার প্রভাব কমিয়ে আনব। এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি এবং এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply